আজ || সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম :
 


লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় খালিদ হাসান

গাজী জাহিদুর রহমান:
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরে অবস্থিত ঝাঁপালি গ্রাম। এখানে মাত্র ৩ শতক খাসজমিতে মা এবং ছোট বোনের সাথে বসবাস করে খালিদ হাসান (১৩)। খালিদের বয়স যখন মাত্র চার বছর তখন তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেই থেকে বাকপ্রতিবন্ধি মা তার বাবার বাড়িতে থাকত এবং নদীতে মাছ ধরে ও দিন মজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করত। দুই সন্তানের খাওয়া-দাওয়াসহ অন্যান্য খরচ মেটানো মায়ের জন্য খুবই কঠিন ছিল। যেখানে তিনবেলা খাবার জোটেনা সেখানে অন্যান্য চাহিদা কিভাবে মেটাবে এনিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতো তার মা…। এক পর্যায়ে খালিদ সংসারের হাল ধরার জন্য নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নেয়। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তার পড়ালেখা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এ সময় সে নিয়মিত স্কুলে যেত না, পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতো না। এক পর্যায়ে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ঝাঁপালি গ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত শিশুদের নিয়ে উত্তরণ ব্রিজ স্কুল তৈরী করলে খালিদকে স্কুলে আসতে উদ্বুদ্ধ করে তার মা। সে ঝাঁপালি ব্রিজ স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করে। বর্তমানে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র খালিদ ব্রিজ স্কুল থেকে খাতা,কলমসহ বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন কোন শিক্ষকের কাছে তাকে অতিরিক্ত প্রাইভেট পড়া লাগে না।
খালিদ হাসান জানায়, ‘আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু পরিবারে অভাবের কারণে সেটি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। বাকপ্রতিবন্ধী মায়ের একা উপার্জনে আমাদের সংসার চলে না। ছোট বোনটি স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। তারও লেখাপড়ার খরচ আছে। এসব সমস্যার কারণে মাছ ও কাঁকড়া ধরার কাজ করাই লাগবে। স্কুলের সময় হলে আসবো, বাকি সময় নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরার কাজ করবো। একটু কষ্ট হলেও নিজের এবং বোনের লেখাপড়া চালিয়ে যাবো। নিজেদের শিক্ষিত মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবো।’
উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে এডুকো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই চারটি ব্রিজ স্কুলে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুর শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৫ জন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং, ৩৭ জন ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং,২৫ জন অটো ম্যাকানিক এবং ১৩ জন ইলেকট্রিক হাউজ ওয়ারিং ও সোলার সিষ্টেম বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ব্যবসাসহ আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছে। খালিদ হাসানের মতো অনেক ছেলে-মেয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি কাজ করে রোজগার করছে।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ আলম জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী আনিছুজ্জামান আনিচ বলেন, উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। খালিদের মতো অনেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে কিছু উপার্জন করছে।

 


Top